আপনারা দেশে স্যামসাং স্মার্টফোন উৎপাদন করছেন। কভিড পরিস্থিতিতে কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
রুহুল আলম আল মাহবুব : কভিড-১৯ সত্যিই পৃথিবীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে এসেছে। জীবন ও জীবিকা দুটোই এখন বিশ্বজুড়ে বিপর্যয়ের মুখে। আমাদের সচেতনতা এবং সতর্কতাই কেবল আমাদের রক্ষা করতে পারে। এ কথা বলেই শুরু করছি। কারণ এখন নিজে সতর্ক থেকে সুরক্ষিত থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
এবার আপনার প্রশ্নে আসছি। আমরা স্মার্টফোন উৎপাদন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি। কারণ কারখানা স্থাপনের শুরু থেকেই কমপক্ষে তিন বছরের যন্ত্রাংশের মজুদ রাখা হয়েছে। ফলে যখন মহামারি শুরু হয়েছে তখন যন্ত্রাংশ নিয়ে সংকট হয়নি। গত বছর লকডাউনে উৎপাদন বন্ধ থেকেছে। পরে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার অনুমতি দিলে আর সমস্যা হয়নি। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত এক বছর ধরেই আমাদের কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত আছে। বর্তমানে দেশের বাজারে স্যামসাংয়ের যত স্মার্টফোন বিক্রি হচ্ছে, তার শতভাগই দেশে উৎপাদিত। সামান্য কিছু হ্যান্ডসেট এখন পর্যন্ত গ্রে মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। আসলে দেশে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর চোরাচালান বলুন, গ্রে মার্কেট বলুন- সবই একেবারেই নিরুৎসাহিত হয়েছে।
সমকাল : লকডাউনে বিক্রিতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি?
রুহুল আলম আল মাহবুব : অবশ্যই প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি মেবাইল ফোন বিক্রি হয় দুই ঈদে। অথচ গত বছর করোনা মহামারিজনিত লকডাউনের কারণে দুই ঈদেই মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ ছিল। এ বছরও রোজার শুরুতে লকডাউন। ফলে আসন্ন ঈদে বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তা তো আছেই। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, হতাশ নইও। কারণ দেশে মহামারির মধ্যে গত বছরে আগের বছরের চেয়ে স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে। এ সময় মানুষ অনেক বেশি অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে স্মার্ট ডিভাইসের চাহিদা বেড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে প্রায় ৭৬ লাখের মতো বিক্রি হয়েছিল, ২০২০ সালে তা ৮৮ লাখের বেশি। ২০১৯ সালে যত স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, তার ৬২ শতাংশ দেশে উৎপাদিত ছিল। আর ২০২০ সালে যত বিক্রি হয়েছে, তার ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত। আশা করছি, এ বছর মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশই দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সমকাল : দেশে মোবাইল গ্রাহকদের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বড় একটা অংশ প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এর কারণ কী?
রুহুল আলম আল মাহবুব : এর প্রধান কারণ, দেশে মানসম্মত ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত না হওয়া। আন্তর্জাতিক মানের ফোরজি সেবা না থাকার কারণে অনেকেই স্মার্টফোন কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন না। ধরুন, একজন স্মার্টফোন কেনার পর যখন দেখেন সেখানে ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেটের গতি খুবই নিম্নমানের, তিনি খুব সাধারণভাবে যেসব সার্ভিস চান যেমন- ওটিটি কল, সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রেই যদি কাঙ্ক্ষিত গতি না পাওয়ার জন্য বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তিনি নিয়মিত স্মার্টফোন ব্যবহারে কম উৎসাহিত হবেন। অবস্থাটা এমন যে, গ্রাহকরা বলে, ‘একটা সাধারণ মোবাইল কল করতে গেলেই বারবার কলড্রপের মুখে পড়তে হয়, অস্পষ্ট, ভাঙা ভাঙা কথা শোনা যায়। মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে ওটিটি কল করতে গেলে বারবার ফ্ল্যাকচুয়েশন হয়, কল ইন্টারাপটেড হয়, এখানে স্মার্টফোন ব্যবহার করে লাভ কী?’ আমি দৃঢ়ভাবেই বলতে চাই, যদি ফোরজি সার্ভিস সাব স্ট্যান্ডার্ড থেকে মোটামুটি একটা স্ট্যান্ডার্ডে আসে তাহলেও দেখবেন স্মার্টফোনের ইউজার ছয় মাসের মধ্যে এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
সমকাল : সরকারি নীতি কতটা দেশীয় উৎপাদন সহায়ক বলে মনে করছেন?
রুহুল আলম আল মাহবুব : আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের সহায়ক তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছেন এবং তা বাস্তবায়নে অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অত্যন্ত সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিকাশে দুর্দান্ত গতি নিয়ে এসেছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আপাদমস্তক একজন ডিজিটাল চিন্তার মানুষ, যার অনুপ্রেরণা এবং কর্মপরিকল্পনায় দেশে স্মার্টফোনসহ তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে আজকের এ সাফল্য এসেছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হবে।
News link স্যামসাং ফোনের শতভাগ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে